সংবাদ শিরোনাম
ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের পদযাত্রা পরপারে চলে গেলেন পরোপকারী কুরিয়া প্রবাসী কাজী শাহ আলম মোবাইল আসক্তি ঠেকাতে ও ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ বিজয়নগরে জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজন আটক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবা।। এলাকায় শোকের ছায়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষা সপ্তাহ’র উদ্বোধন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে সম্প্রসারিত করে পরিকল্পিত নগরায়ন করা হবে: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী এমপি কমলগঞ্জে শমশেরনগরে রেলপথ ঘেষে জমে উঠে অবৈধ পশুর হাট; দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বাংলালিংক ও হুয়াওয়ের চুক্তি ডেঙ্গু ঠেকাতে সোমবার থেকে মাঠে নামছে ডিএনসিসি

বাউবি পরীক্ষার্থী সাজেদা বেগম।। সাজেদা বেগম একটি অনুপ্রেরণার নাম!

বাউবি পরীক্ষার্থী সাজেদা বেগম।। সাজেদা বেগম একটি অনুপ্রেরণার নাম!

সাজেদা বেগম। একটি অনুপ্রেরণার নাম। অদম্য একজন নারী! প্রবহমান বাংলার একজন হার না মানা মায়ের গল্পের মতো যেন জীবন তাঁর। প্রায় ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা তিনি। বুক ভরা স্বপ্ন, দৃঢ়চেতনা আর অসীম সাহস-ই তাঁর সঞ্জীবনী শক্তি। দৃষ্টিশক্তির অস্পষ্টতা, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা বয়সের ভার কোন কিছুই রুখতে পারেনি তার পথচলাকে। হ্যাঁ, গতকাল বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা আ লিক কেন্দ্রে এসএসসি ভর্তি পরীক্ষার হল পরিদর্শনকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার দেখতে পান সাজেদা বেগমকে। ‘বাউবির দীক্ষা: সবার জন্য উন্মুক্ত কর্মমুখি, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম/জেএসসি বা সমমানের সনদ নেই যাদের, তাদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এসএসসি প্রোগামে ভর্তির সুযোগ করে দেন। দেশব্যাপী সাজেদা বেগমের মতো সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী আগ্রহী শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত হয়। ফলে, রাতজাগা দীর্ঘশ্বাস, বুকজুড়ে রক্ষণ আর হতাশার শেকল ছিড়ে নতুন আলোয় উদ্ভাসের সুযোগ পান তারা। গল্পে গল্পে শুনি সকল চক্ষুলজ্জা, অবসাদ আর শৃংখলার সীমানা পেরিয়ে আসা সাজেদা বেগমের শিক্ষা বিরতি, ব্যক্তি জীবন, স্বপ্ন ও আগামীর কথা।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগে জন্ম তাঁর। আরো স্পষ্ট করে বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। বর্তমান এয়ারপোর্ট ১ নম্বর টার্মিনালেই ছিলো তাদের আদি বাড়ি। নবাব হাবিবুল্লাহ গার্লস স্কুলের ছাত্রী ছিলেন সাজেদা বেগম। স্কুলের গন্ডি পেরুতে না পেরুতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ইয়ং অফিসার আবুল হাসেমের সাথে। তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট, বাস্তবতায় অষ্টম শ্রেণীতেই খাঁচাবন্দী হয় সাজেদা বেগমের স্বপ্ন। এরপর কোলজুড়ে বড় মেয়ে হাসিনা আখতার, মেজো ছেলে মাসুদ রানা ও ছোট সন্তান মাসুম রেজা আসে। হাড় ভাংগা শ্রম আর স্বপ্ন লালন করে মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংকয়ের এজিএম। মাসুদ রানা কম্পিউটার সায়েন্সে জার্মান থেকে উ”চতর ডিগ্রী নেন আর মাসুদ রেজা উচ্চতর শিক্ষা সম্পন্ন করে ব্যবসা করছেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির খবর পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে সাজেদা বেগম বলেন “একদিন ছোট ছেলে একটা পত্রিকা নিয়ে এসে বললো ‘দ্যাখছো মা কিশোরগঞ্জের বাউবি’র এই ছেলে চা বিক্রি করে এসএসি পাশ করছে, তোমার তো লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ, তুমিও পরীক্ষা দাও। আমরা তোমার লগে আছি। ”ব্যাস! সে দিন থেকেই বড় মেয়ের সাথে বাউবিতে আসা যাওয়া। প্রথমে লজ্জা লাগলেও পরে দেখি- সব বয়সের নারী পুরুষ, ডাক্তার, চাকরীজীবী, সচিব, পুলিশ, আর্মি, শারীরিক প্রতিবন্ধী সবাই এখানে বিভিন্ন প্রোগামে পড়াশোনা করে। আমার মনে শক্তি জাগলো। ছোট ছেলে ও নাতি মোবাইলে ইন্টারনেটে দেখিয়ে দিলো কিভাবে ক্লাশ হয়, কী কী বিষয় পড়তে হয়। ভর্তি, টাকা জমা, নোটপত্র, বই সব মোবাইলে। সব কিছু এতো সহজ হয়ে গেল যে, মনে হল যেন বুক থেকে পাহাড় সরে গেল। বাউবি’র শিক্ষা ব্যবসা এতো সহজ, সুন্দর! এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না। আজকে ভিসি স্যারসহ সকলে আমাকে খুব উৎসাহ, সাহস দিলেন।”
সাথে আসা বড় মেয়ে হাসিনা আখতার বলেন, “আমার এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে মা ব্যাপক জনপ্রিয়। অসংখ্য মানুষের দৈনিক রোজগারের টাকা আম্মার কাছে তারা আমানত হিসেবে রাখেন। জিম্মাদার খালা নামে ডাকেন তারা। মা নকঁশী কাথা খুব সুন্দর সেলাই করেন। এক সময় বাণিজ্যিকভাবে সেলাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমরা। মাায়ের নান্দনিক সুনিপুণ কারুকাজ আমাদের বিস্মিত করে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় আদিভাষায় অর্ধ শত বিয়ের গীত জানেন তিনি। আত্মীয় স্বজনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এখনও ডাক পরে আম্মার।” জীবন সায়াহ্নে এসে কী স্বপ্ন দেখেন আপনি, এমন প্রশ্নে জবাবে সাজেদা খাতুন বলেন, ‘‘আমি অনেকদূর পড়াশোনা করতে চাই। আল্লাহ বাঁচায়ে রাখলে বাউবি থেকে এসএসসি, এইচএসসি পাশ করে নকঁশী কাথা নিয়ে কাজ করে এমন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একদিন আমি ভর্তি হবো।”
সুযোগ ব িত, অবহেলিত, নারীদের শিক্ষার সুযোগ সম্পর্কে বাউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সাজেদা বেগম একটি সাহসের নাম। একজন অনন্যা, অপরাজিতা। শিক্ষাব িত নারীদের আদর্শ। এদেশে অসংখ্য নারী আছেন মেধাবী কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক চাপ, কৌশরে বিয়ের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। বাউবির শিক্ষাক্রম সব সময় তাদের পাশে। আমরা সারা দেশেই সকল বয়সের, পেশার নাগরিকের ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছি। এমন কী সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, দুবাই, ইতালিতে অবস্থানরত বাঙালি রেমিটেন্স যোদ্ধারা সেখানে বসে এখন বাউবির বিভিন্ন প্রোগামে শিক্ষা গ্রহণ করছে। পটুয়াখালির সাগড়পাড়ের জেলে হাসান শেখ, কিশোরগঞ্জের চা বিক্রেতা হরুন মিয়া, বগুড়ার হুইল চেয়ারের যোদ্ধা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নুরজাহান রিয়া কিংবা নারী সাফ ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন সাবিনা খাতুন, মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ফটোগ্রাফার নিজামুল বিশ্বাস- এরা সবাই বাউবির স্টুডেন্ট। সব মিলিয়ে, দক্ষতা, শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে ও আলোকিত মানুষ গড়তে বাউবি আজ একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান।”
লেখক- মো. আব্দুল হাই বাবু
তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com